একজন বেশ্যা এর গল্প

""আমি একটি বেশ্যার গল্প বলছি""

লেখকঃ Doctor Ariful Islam

সার্বিক সহযোগিতায়ঃ আশার প্রদীপ™

পাবলিশঃ Md Billal Hossain

বেশ্যা,,,এই নামটি শুনলেই আমাদের ভদ্র সমাজে সবাই চমকে উঠে।বেশ্যা কত ভয়ানক কত নিকৃষ্টতম প্রাণী।বেশ্যাকে আমি প্রাণি বলেই সম্মোধন করলাম কারণ মানুষ হলে তো তাকে সবাই সম্মান করত।আসল কথায় আসি।

সালেহা,,,১৩বছরের একটি মেয়ে ।
৭ম শ্রেণীতে পড়ে।
রোজ স্কুলে যেত, পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াত আনন্দ উম্মাদে।কোন এক অবিনিশার তিমিরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় তার মা।পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে তার যেন অর্ধেকটা হারিয়ে গেছে।

এমনটিই হয় প্রতিটা সন্তানের।সালেহার বাবা কিছুদিন পর বিয়ে করেন।এবার নেমে আসে তার জীবনে দূঃখ যন্ত্রণার ছোয়া।সবাই সাহেলাকে মা খাকী বলে ডাকে।খাকী বলতে বোঝায় রাক্ষসী, মানে দাড়ায় সে তার মা কে মেরে ফেলেছে।সমাজে এখন আর তাকে ভালো চোখে দেখে না,স্কুলের বন্ধুরা ও।

সবাই যেন একটা বিরুপ চোখে তারদিকে তাকায়।তার কারন ভদ্রসমাজ তার নাম দিয়ে মা খাকি।
সংসারে নতুন মা আসার ক'দিন পর বেধে যায় ঝামেলা।সংসারের যাবতীয় কাজ সালেহাকে দিয়ে করানো শুরু করলো।স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলো।মা বেচে থাকতে সালেহার জীবন আর এখনকার জীবনে আকাশ পাতাল পার্থক্য এসে গেছে।তিনবেলা সময় মত ভাত ও পায় না।

মা বেচে থাকতে সালেহা অভিমান করলে মা তাকে আদর করে খাইয়ে দিত,কিন্তু এখন অভিমান তো দূরের কথা না চাইলে ও খেতে দেয় না।তার সব সুখ আহ্লাদ উঠে গেছে মা মারা যাওয়ার পর থেকে।
এক মাস না যেতেই সালেহাকে সংসার থেকে বিদায় করার ফন্দি আটে তার সৎ মা।বাবার সাথে পরামর্শ করে সালেহাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য।বাবা ও রাজি হয়ে যান।কিন্তু সালেহাকে বিয়ে করবে কে?ভদ্র সমাজ যে তাকে মা খেকো বলে জানে।ভালো পাত্র কে বা তাকে বিয়ে করবে।

অবশেষে মাঝবয়সী এক নেশাগ্রস্থ মানুষকে খুজে পায়।তার বউ নাকি দূরারোগ্য রোগে মারা গেছে।তাই সংসারে একটা বোউ দরকার।

সালেহা মা মারা যাওয়ার পর একটা কাঠের পুতুলের সমতূল্য হয়ে গেছে তাকে আজ যেভাবে নাড়ানো হয় সে আজ সেভাবে নড়ে।সৎ মা এর কথা মত বিয়ে হলো সেই মাঝ বয়সী নিজের বাবার বয়সী এক পুরুষের সাথে।আজ তার বাসর রাত।ছোট বয়সী এই মেয়েটা কিবা জানে বাসর সম্পর্কে খুব ভয়ে ভয়ে আছে।তার স্বামী বাসর ঘরে প্রবেশের পূর্বে মদ খেয়ে নিলো।

সালেহা এই বিশ্রী গন্ধটা নিতে পারেনা।তাই মুখে কাপড় দিয়ে চেপে ধরে বসে থাকলো।নেশাগ্রস্থ স্বামী সালেহার সাথে তার মতের বিরুদ্ধে অমানসিক নির্যাতন করলো।যেটাকে বলে ধর্ষন।কিন্তু আমাদের ভদ্র সমাজ বিয়ে করলে তাকে বাসর রাত বলে।রাতটা তার খুবই কষ্টে কাটলো।
ও দূঃখিত,বলতে ভুলেই গেছি মাঝ বয়সী বেটা মানে তার স্বামীর সংসারে দুইটা জোয়ান ছেলে আছে।পরদিন সকালে সালেহা বিছানা থেকে উঠতে পারছে না।

উঠবেই বা কেমন করে সারারাত তার সাথে ক্ষুধার্ত পশুর মত যে আচরণ করা হয়েছে। স্বামীর চিৎকারে অনেক কষ্টে সালেহা বিছানা থেকে উঠে পড়লো।তাকে নিয়ে রান্নাঘর দেখিয়ে দেওয়া হলো সংসারের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হলো।সালেহা রান্না শুরু করলো পুরা শরীরটা তার ব্যথা নিজের মনের ভিতর ব্যথা সে ডুকরে ডুকরে কাদতে লাগলো।তার কান্না দেখার মত আজ কেউ নেই।মায়ের কথা তার আজ খুবই মনে পড়ছে।

সামান্য মাথা ব্যথা করলে সে স্কুল যেত না মা তাকে সেবা করত মুখে তুলে খাইয়ে দিত।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন অঝরে চোখের পানিতে কাপড় ভিজে গেলো।হঠাৎ এক চিল্লানিতে তার কল্পনা জগৎ শেষ হয়ে গেলো।

রান্না শেষ হতেই সবাই খেতে দিতে হলো।সবাই খেয়ে উঠে গেলো কিন্তু সালেহার জন্য সামান্য কিছু ভাত রেখে দিলো।ভালো মাছ তরকারি সব খেয়ে শেষ করলো।সালেহা ক্ষুধার যন্ত্রণা না সইতে পেরে ভাতটুকু লবণপানি মিশিয়ে খেয়ে নিলো।

সালেহার স্বামীর ছেলে মানে তার সৎ ছেলে দুইটা তাকে মা বলে মানতে রাজিনা।আর মানবেই বা কেমন করে তাদের যে সৎ মা তাদের চেয়ে কম বয়সী।ছেলে দুইটা ও নেশাখোর। তারা মদ গাজা সহ যতপ্রকার নেশা আছে সবকিছুতে আসক্ত থাকে।

সালেহার প্রতিটা দিন কাটছিলো সংসারের যাবতীয় কাজ করতে করতে।সারাদিন কষ্ট করার পর যে রাতে একটু বিশ্রাম নিবে সেটা ও হতো না নেশাগ্রস্থ স্বামীর জন্য।সারা রাত তাকে ধর্ষিত হতে হতো।একদিন সালেহার স্বামী কাজের উদ্দেশ্য বাহিরে গেলো।ফিরতে ক দিন দেরী হবে।

সে রাতে তার জীবনে কাল রাত নেমে আসে।তার সম্পর্কে সন্তান সমতূল্য ছেলে দুইটা নেশাকরে তার ঘরে প্রবেশ করে।পালাক্রমে সালেহাকে ধর্ষণ করে।সালেহা আজ ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা এক প্রাণীর মত যার সাহায্য করার মত এই পৃথিবীতে কেউ নেই।এভাবে চলতে থাকে কয়েকদিন।তাদের বাবা ফিরে ৭দিন পর।

সালেহা স্বামীকে ও বলতে যেয়ে বলতে পারলো না ভয়ে।স্বামী যখন দিনে কাজে যেতো তখন ছেলে দুটা পালাক্রমে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতো।একদিন কাজ না হওয়ার কারণে তার স্বামী দ্রুত বাড়িতে আসে এবং সেগুলো দেখে ফেলে।

নিজের সন্তানদের কিছুনা বলে সালেহাকে বেশ্যা বলে আখ্যায়িত করে মারতে মারতে বাপের বাড়ি দিয়ে আসে।সমাজে তার আরেকটা খ্যাতি তৈরি হলো।সবাই তাকে বেশ্যা বলে ডাকতে লাগলো।কিছু কিছু ভদ্র গুণীজন তাকে আজ প্রলোভন দেখাতে শুরু করলো ইঙ্গিতে তাকে বেশ্যাবৃত্তি করতে বলতে শুরু করলো।
স্বামীর সংসার থেকে সে আজ সপ্তাহ খানেক বাপের বাড়ি।

স্বামী তালাক নামা পাঠিয়ে দিয়েছে।সালেহা মায়ের কবরের পাশে যেয়ে শুধুই কাঁদতে থাকে।ক দিন যেতে না যেতেই সংসারের বোঝা হয়ে দাড়ায় সালেহা।সৎ মা নির্যাতন শুরু করে দিলো।

এক প্রতিবেশী মহিলা শহরে কাজের প্রলোভন দেখালো,সালেহার বাবার সাথে কথা বললো তাতে তার বাবা রাজি ও হইলো।সালেহা শহরে গেলো।একটা বাসায় তাকে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে তার সম বয়সী,তার থেকে বয়সে বড় অনেক মেয়েরাই আছে।

সবার জন্য আলাদা ঘর দেওয়া আছে।পুরুষদের আসতে যেতে দেখে তার বুঝতে বাকি রইলো না সে কোথায় আসছে আজ।কিন্তু সে সবকিছু মেনে নিলো পৃথিবীর কোথাও যে তার ঠাই নাই।টাকার বিনিময়ে আজ সে তার শরীর কে বিক্রি করতে শুরু করলো।আজ এখানে নেই কোন স্বামী নামক নরপশুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিনা পারিশ্রমিকে ধর্ষিত হওয়ার ভয়,না খেয়ে থাকার কোন ভয়।আজ সালেহা ভালো মন্দ খেতে পারে,ভালো কাপড় পরতে পার।আর এসব টাকা দেয় সেইসব গুণীজন যারা দিনের আলোতে বেশ্যা নাম শুনলে ছি ছি করে।তারাই রাত হলে বেশ্যার বিছানায় শুয়ে পড়ে।

এটাই আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। বেশ্যা মারা গেলে তার জানাযা ও পড়তে যায়না ভদ্র সমাজ।

শিক্ষামূলক এই গল্পটি লেখকের কাল্পনিক হলেও সমাজে চলেছে এমন অহরহ  ঘটনা।

নিজেকে পরিবর্তন করুন।

তাহলে সমাজও পরিবর্তিত হবে।

আপনাদের সকলের শুভকামনায় আজ এই পর্যন্তই।

আল্লাহ হাফেজ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ

বাত ব্যাথা নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি